ঘটনা : ১ (হারানো শিশু ফিরে পেল তার ঠিকানা-১)
আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা …
আমার ছেলে সন্তান হওয়ার কিছুদিন আগের কথা, সম্ভবত ২০১৪ সালের মে মাসের শেষের দিকে। আমি তখন অফিসে, দুপুরবেলা বাসা থেকে ফোন আসল যে আমার স্ত্রীর শরীর অনেক খারাপ তাকে অক্সিজেন দেয়া লাগবে, হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার মত কেউ নেই। আমি তাড়াহুড়া করে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে রিকশা করে বাসায় ফিরছি। টেনশনে আমার অবস্থা বারোটা। বাসার গলির সামনে এসে রিকশা বিদায় দিতেই আচমকা একটা ছেলে শিশুর দিকে চোখ পড়ল। শিশুটির বয়স ৪ বা ৫ বছর হবে। অনেক কান্নাকাটি করছে আর কাকে যেন খুজঁছে। আমি ‘ কি হয়েছে তোমার?’ জিজ্ঞাসা করতেই সে আমার হাত ধরে কান্না করতে করতে বলল ‘আমি আম্মুর কাছে যাব’। বুঝলাম যে সে হারিয়ে গেছে। আমার অবস্থা এমনিতেই খারাপ তার মধ্যে আবার এই ঘটনা।
কিন্তু….এখন আমি কি করবো? বাসায় যাব নাকি এই শিশুটিকে তার মায়ের কাছ পৌঁছে দিব। আশেপাশের মানুষদের সহযোগীতা চাইলাম। কেউ সহযোগীতা করতে চাইল না। সবাই বলল থানায় দিয়ে আসতে। কিন্তু, শিশুটা আমার হাত এমনভাবে ধরে রেখেছে যে সে আমাকে ছাড়বেনা, তার ভয় অনেক কমে গেছে। আমি একমুহুর্তের জন্য শিশুটির হাতটা ছেড়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু পরে আবার ফিরে এসে হাতটা শক্ত করে ধরি। আমি তাকে এভাবে ফেলে যেতে পারিনা আমার ঘরেও ছেলে সন্তান আসতেছে। আমি আর কিছু চিন্তা ভাবনা না করেই তাকে নিয়ে খুজঁতে শুরু করি।
….কিছুক্ষনের মধ্যেই একজন রিকশাওয়ালা শিশুটির কান্না দেখে রাস্তায় আমাকে বলল এই শিশুটি কি তার মাকে খুজঁছে? আমি বললাম হ্যাঁ। সে বলল, একটি মহিলা পাগলের মত ‘মাওলা বখশ সরদার রোডে’ তার ছেলেকে খুজঁছে। আমি বললাম আপনি আমাকে নিয়ে যাবেন সেখানে। সে প্রথমে রাজী হয় নি, পরে ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলতেই সে নিয়ে গেল। সেখানে যেয়ে প্রথমে কাউকে পাই নি। পরে কয়েকজনের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে আমি নিশ্চিত হয়ে ছেলেটিকে তার পাগলপ্রায় মার কোলে ফিরিয়ে দিলাম। এবার আমি বাসায় ফোন করলাম, অনেক ভয় লাগছিল। কিন্তু, ফোনে জানলাম আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে , এখন তাকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে এবং মা ও ছেলে দুজনেই সুস্থ আছে। আমার স্ত্রী কল করে আমার শাশুড়ীকে বিষয়টি জানালে সে বাসায় এসে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমার চোখে পানি চলে আসল।
আমি এই ঘটনা থেকে একটা বিষয়ই শিখলাম ‘যে অপরকে সহযোগীতা করে, আল্লাহ পাক তাকে অবশ্যই সহযোগীতা করেন’।
ঘটনা : ২ (হারানো শিশু ফিরে পেল তার ঠিকানা-২)
কলেজ জীবনের পুরনো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য একদিন টি.এস.সি তে যাই। দুই বন্ধুর আসতে দেরী হওয়াতে আমি ও আরেক বন্ধু মিলে পাশেই উদ্যানে ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ ও মিউজিয়াম’ দেখার জন্য যাই। কৃত্রিম লেকের পাশে বেঞ্চে কিছুক্ষন আড্ডা দেয়ার পর দেখি দূর থেকে একটা ছোট্ট ছেলে শিশু কাঁদতে কাঁদতে আসছে। আমি প্রথমে ভাবলাম হয়তো বাবা মা বকা দিয়েছে তাই কাঁদছে। একটু পর খেয়াল করতাম তার সাথে আসলেই কেউ নেই। আমি বন্ধুকে বললাম, ‘শিশুটি মনে হয় হারিয়ে গেছে ? চল যাই।’ আমার বন্ধু বলল, ‘বাদ দে এখানে বিপদে পড়ার আশংকা আছে।’
নিজেকে মানাতে পারলাম না, আমার ছেলের মুখ মনে পড়ল। শিশুটির পিছুপিছু গেলাম বহুদূর। তারপর হাত ধরে জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে? সে বলল, ‘আম্মু কোথায় জানি না?’ আমিতো এবার নিশ্চিত। শিশুটি আর বেশি কিছু বলতে পারেনা।
আমি তারপর তার হাত ধরে খোঁজা শুরু করলাম, অনেকেই গতানুগতিক উপদেশ দিয়ে বলল, থানায় দিয়ে দেন। আমি মানতে নারাজ, তারপর অনেক খুঁজে শিশুটির মা ও বোন দের সন্ধান পেলাম। মাকে পেয়ে শিশুটি জড়িয়ে ধরে। আমিও স্মৃতি হিসেবে ছবি তুলে রাখলাম।
পরে আমার স্ত্রী কে ফোনে ঘটনাটি জানালাম এবং বললাম যে, ‘আমার সাথেই কেন এমন ঘটনা ঘটে?’ সে বলল, ‘সবার সাথেই ঘটে কিন্তু, সবাই এড়িয়ে যায় আর আপনি এগিয়ে যান তাই।’……
ঘটনা : ৩ ( বিচিত্র জীবন)
আমার অফিস পান্থপথে। পান্থপথ থেকে হেঁটে কারওয়ানবাজারে এসে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে বাসায় আসি। একদিন কারওয়ান বাজারে ইটিভি ভবনের বিপরীত পার্শে রাস্তা পার হওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছি হঠাৎ লক্ষ করলাম একজন স্মার্ট ভদ্রলোক বয়স আমার থেকে কিছু বেশি সে হাতে সাদা ছড়ি নিয়ে দ্বিধান্বিত অবস্থায় এদিক সেদিক হাঁটছেন। বুঝতে পারলাম ভদ্রলোকটি দৃষ্টিশক্তিহীন তাই রাস্তা বুঝছেন না। আমি আমার স্বভাববশত উনাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যাবেন? উনি বললো যে উনি শাহবাগ হয়ে কোথায় যেন যাবেন। আমি বললাম আপনি তো ভূল পথে যাচ্ছেন। এখান দিয়ে গেলে মিরপুরের দিকে যাবেন। আপনাকে রাস্তা পার হয়ে শাহবাগের গাড়ীতে উঠতে হবে। ভদ্রলোক আমাকে বললেন, ধন্যবাদ ভাই তাহলে তো রাস্তা পার হতে হবে। বলেই আবার আগের মত এদিক সেদিক হাটঁছেন।
আমি আবার গিয়ে বললাম, আমার বাসা পুরান ঢাকায়, আমিও শাহবাগ হয়ে যাবো। আমি আপনাকে রাস্তা পার করে দিচ্ছি। উনি খুব খুশী হয়ে গেলেন। তারপর তার সাথে কথা বলতে বলতে কারওয়ান বাজার আন্ডারপাস হয়ে যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করলাম আপনি কি করেন? বললেন একটা প্রাইভেট সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেন, অনেক বছর আগে দেখতে পেতেন কিন্তু আস্তে আস্তে দৃষ্টিশক্তি কমে গেছে। তারপর কথায় কথায় বললাম আপনি কোথায় পড়াশুনা করেছেন? যখনই উনি বললেন যে নটর ডেম কলেজে পড়াশুনা করেছেন তখনই চমকে উঠে বললাম আমিও তো নটর ডেম কলেজের ছাত্র , ২০০৩ ব্যাচ। উনি আমার চেয়ে কয়েক বছরের সিনিয়র।
যাই হোক, এখন তো কলেজের বড় ভাই। দ্বায়িত্বটা আরো বেড়ে গেলো। রাস্তা পার হওয়ার পর কোনো খালি বাস পাচ্ছিলাম না যেটাতে দুইজন মিলে উঠতে পারবো। বিরক্ত হয়ে চিন্তা করলাম এখন যে বাসই আসুক সেটাতে দুইজন মিলে উঠে পড়বো তারপর উনাকে শাহবাগে নামিয়ে অন্য বাসে তুলে তার বাসায় পাঠিয়ে তারপর নিজের বাসায় যাবো। হঠাৎ সামনে একটা বাস দেখতে পেয়ে উনাকে অনেক কষ্টে উঠালাম কিন্তু আমি উঠার আগেই বাসটি এমন জোরে টান দিলো যে উঠতে পারলাম না। আমি যে উঠতে পারিনি সে কথাটুকু বলার সুযোগ ও পেলাম না। যাই হোক, তার জন্য দুশ্চিন্তা আর মন খারাপ করে বাসায় ফিরেছিলাম।
এই ঘটনার প্রায় কয়েক মাস পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে নটর ডেম কলেজের রি ইউনিয়নে বন্ধু বান্ধবদের সাথে আনন্দ করার এক পর্যায়ে একজনের দিকে চোখ পড়তেই মনে পড়ে গেল তার চেহারা। দৌঁড়ে তার কাছে গিয়ে বললাম ভাইয়া কেমন আছেন? আমার সাথে আপনার দেখা হয়েছিল কারওয়ান বাজারে। উনি সাথে সাথে বললেন, হ্যাঁ পুরান ঢাকায় বাসা আপনার তাই না! তারপর তার সাথে অনেক কথা ও একটি সেলফি।
আমাদের জীবন বড়ই অদ্ভুত, বড়ই রঙিন, একদম পূর্ন দৈর্ঘ্য চলচিত্রের মত।
ঘটনা :- ৪ (প্রবীনদের স্মরন পরম শ্রদ্ধায়)
আজ সকালে অফিসে আসার সময় ধানমন্ডি ৩২ এ বাস থেকে নেমে পান্থপথে আসার সময় দেখি সাদা পাঞ্জাবী পড়া এক বৃদ্ধ রাস্তার পাশে দাড়িঁয়ে কেমন যেন করছে। তার ভাব ভঙ্গি দেখে বুঝলাম সে কিছুক্ষনের ভিতরেই পড়ে যাবে। আশে পাশের অনেক পথচারীরাই দেখছে কিন্তু তার কাছে কেউ যাচ্ছে না। আমি দ্রুত গিয়ে তার হাত ধরতেই সে ‘আমি পড়ে যাবো’ বলে আমার উপর তার শরীর এলিয়ে দেয়। আমি সাথে সাথে রাস্তার পাশেই ‘লাজ ফার্মা’ এর সামনে তাকে চেয়ারে বসাই। সিকিউরিটি গার্ডের সহায়তায় তাকে পানি খাওয়াই ও মাথায় পানি ঢেলে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? কোথায় যাচ্ছিলেন? উনি বললেন, যে সকালে নাস্তা না করেই হাটাঁর জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। তার বাসা কাঠাল বাগানে, বাজারের পাশে। তার বয়স ৮৬ বছর, চোখে ঝাপসা দেখেন, ডায়াবেটিস খুব বেশি তাই অপারেশন করানো যাচ্ছে না। প্রায় ৫০ বছর উনি চাকুরী করেছেন, রাশিয়ান এম্বেসীতেও দীর্ঘদিন কাজ করেছেন বলে জানান। তার তিন ছেলে বাসার বাইরে গেছে কাজে, বাসায় ছেলের বৌ ও মেয়ে আছে। উনি কাউকে না বলেই বের হয়ে গেছেন। আমি প্রশ্ন করলাম , আপনি সকালে কি খেতে পছন্দ করেন? উনি চা আর পাউরুটি খাবেন। তার জন্য চা আর পাউরুটি এনে খাওয়ানোর পর অনেকটা সুস্থ বোধ করলেন। তখন তাকে নিয়ে তার বাসায় যাওয়ার জন্য তৈরী হওয়ার সময় হঠাৎ উনি উনার পাঞ্জাবীর পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে আমার হাতে দিলেন। দেখলাম অনেক মিস কল, আমি সেখান থেকে তার ছেলেকে ফোন দিলাম। তার ছেলেরাও তাকে পাগলের মত খুজঁতে ছিল। তার ছেলেদের কাছে তাকে তুলে দেয়ার সময় আমি ও আমার সহকর্মী সুমন অনুরোধ করলাম তার বাবাকে কোন বকা না দেয়ার জন্য। তারাও হাসিমুখে আমাদের সাথে কথা বলে বাবাকে নিয়ে গেল। বৃদ্ধ লোকটি যাওয়ার সময় আমাকে ধরে অনেক দুয়া করলেন।
অফিসে এসে দেখলাম মোবাইলে একটা এস এম এস। মেসেজটি পড়লাম আর মনে মনে হাসলাম।
‘আর্ন্তজাতিক প্রবীণ দিবস-২০১৮, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রবীনদের স্মরন পরম শ্রদ্ধায়’’ ….
ঘটনা :- ৫ (টাকাই সবকিছু নয়)
২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ২ তারিখের একটি ঘটনা ।
আমি তখন স্বল্প আয়ের চাকুরী করি। অনেক অর্থকষ্টে ছিলাম, নতুন বাবা হয়েছি, টাকার খুব দরকার। মতিঝিলে একটা মিটিং শেষে রাস্তা পারাপার করার সময় একটা কাগজের উপর আমার নজর পড়ল। উঠিয়ে দেখলাম সেদিনের তারিখে প্রায় দুই লাখ (২,০০,০০০) টাকা এর একটি ‘ক্যাশ’ চেক। সাথে লেটার হেড প্যাডে যাবতীয় সকল ফর্মালিটি সম্পুর্ন করা আছে। কারো হাত থেকে পরে গেছে। কারো নাম বা ঠিকানা দেয়া নেই। শুধু ‘প্রান’ কোম্পানীর লোগো দেখলাম। পরে আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সহায়তায় `প্রান’ কোম্পানীর উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে শিউর করলাম। এর পরের দিন তার সাথে দেখা করে চেকটা দিয়ে আসলাম। উনি খুব অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, ‘ আজকের দিনেও এরকম মানুষ আছে ! এই চেকটা আমাদের একজন ডিলারের। আপনি চাইলেই এই ক্যাশ চেকটা ফেরৎ নাও দিতে পারতেন। আমাদের কিছুই করার থাকতো না।’
তার কথা শুনে খুব ভালো লেগেছিল কিন্তু অবাক হয়েছিলাম যে আমাকে আর আমার ভাইকে আসার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত এক গ্লাস পানিও সাধে নাই।
যাই হোক নিজের কাছে তো ভালো আছি, টাকার সমস্যা ঠিক হয়ে যায় কিন্তু চরিত্রে বা সততাতে যদি সমস্যা হয় তাহলে সেটা আর ঠিক নাও হতে পারে।
ঘটনা :- ৬ ( পেনশন ও বার্ধক্য )
একদিন সকালে অফিসে যাওয়ার সময় পান্থপথে স্কয়ার হাসপাতালের আগে দেখলাম এক রিকশাচালক তার রিকশার আরোহী এক বৃদ্ধ লোকের সাথে খুব খারাপ ব্যাবহার করছে। আমি দুর থেকে দেখে কাছে গেলাম। দেখলাম বৃদ্ধ লোকটি তাকে খুব করে অনুরোধ করছে যে, দেখো আমি তো ঠিকমত হাটঁতে পারি না, আর রাস্তাটা চিনতে পারছি না। তুমি আমাকে নামিয়ে দিলে আমি কিভাবে যাবো?
রিকশাচালক তারপরও চিৎকার চেঁচামেচি করে তাকে রাস্তায় নামিয়ে দিলো। আমি বৃদ্ধ লোকটির অসহায়ত্ব দেখে এগিয়ে গিয়ে রিকশাচালককে বললাম, কি হয়েছে ? তুমি এমন ব্যবহার করছো কেন? সে উত্তরে বলে, ‘বৃদ্ধ লোকটি কিছুই চিনে না , জানে না আর ভাড়াটাও জানে না। আমার ভাড়া লাগবে না। আমি তাকে নিবো না।’
আমি রিকশা চালককে দু একটা জ্ঞানবানী শুনাতে গিয়ে ভাবলাম থাক এদের কে বুঝিয়ে কোন লাভ নেই। তাই বৃদ্ধ লোকটিকে প্রশ্ন করলাম যে, আপনি কোথায় যাবেন? সে বললো, ‘আমি ওয়াপদা অফিসে যাবো পেনশনের টাকার জন্য।’ আমি আমার মরহুম নানার সাথে রেগুলার পেনশনের টাকা তুলতে যেতাম। তাই, আজকে সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেল।
আমি তাকে বললাম আপনি আমার সাথে চলেন। বলে আমি সাথে সাথে একটা রিকশা নিয়ে তার সাথে গল্প করতে থাকলাম। তিনি ওয়াপদা অফিসে চাকরী করতেন, অবসরে গেছেন প্রায় বিশ বছর আগে। তার দুই ছেলে এবং এক মেয়ে। এক ছেলে ব্যাংকার এবং আরেক ছেলে স্বনামধন্য নিউজ পোর্টালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর । তারা গাড়ী নিয়ে অফিসে গেছে, ব্যস্ত। তাই বৃদ্ধ লোকটি বাসায় তার বৃদ্ধ স্ত্রীকে রেখে পেনশনের টাকা তুলতে এসেছেন। আমি তাকে পেনশনের অফিসে নামিয়ে দিয়ে আবার সেই রিকশায় অফিসে আসলাম। বিদায়কালে তিনি মন ভরে দোয়া করেছিলেন। স্মৃতি হিসেবে তার অনুমতি নিয়ে একটা ছবি তুললাম।
রিকশায় বসে ভাবতে লাগলাম অফিসে একটু দেরী হয়ে গেছে তো কি হয়েছে দিনটাতো একটা ভালো কাজ দিয়ে শুরু হয়েছে।
অফিস থেকে বাসায় এসে শুনলাম আমার বাবা সন্ধ্যায় রাস্তায় বের হলে একটা মোটর সাইকেল আরোহীর দ্বারা দুর্ঘটনায় পড়তে নিয়েছিলেন কিন্তু আমাদের এলাকার একজন ছেলে তাকে রক্ষা করে বাসায় নিয়ে এসেছে। তার কিছু হয় নি।
আসলেই মহান আল্লাহ তায়ালা যা করেন ভালোর জন্যই করেন আর আপনি যা করবেন ঠিক তাই পাবেন।