‘হাসি’ সৃষ্টিকর্তার এক অপূর্ব দান। একটি নির্মল হাসির মাঝে সৌন্দর্য, পবিত্রতা, বিশুদ্ধতা প্রকাশ পায়। মানুষের সবচেয়ে সুন্দর দিক হচ্ছে হাসি। যেমন তেমন হাসি নয়, নির্মল একটি হাসি, যা অন্তর হতে আসে। একটি চমৎকার হাসির মূল্য কত জানেন ? পৃথিবীর সকল ব্যাংকের টাকা এক করলেও পাওয়া যাবে না। মানুষের সাথে অন্য সকল প্রাণীর একটি পার্থক্য হল হাসি। পৃথিবীতে এই একটি ভাষাই আছে যা সকল মানুষ, সকল জাতি বোঝে তা হচ্ছে হাসি। যখনই আমরা কোনো সুখী মানুষের কথা কল্পনা করি তখন কল্পনার মাঝে হাসোজ্জল একটি ব্যক্তিকে দেখতে পাই। সুখী মানুষরাই হাসতে জানে, আবার যারা হাসতে জানে তারাই সুখী। তাহলে বোঝা গেল হাসতে পারার সাথে সুখের একটা সম্পর্ক আছে। আমরা অনেক সময় বলি মানুষটা খুব হাসি খুশি। এর মানে মানুষটা খুব খুশী, আনন্দিত যার ফলে তার মুখ হতে হাসি বের হচ্ছে। হাসতে পারাটা একটা বড় গুন। এটাকে আয়ত্ব করতে হয়। চেহারা যেমনই হোক হাসলে ভাল লাগে। কথায় বলে হাসিতে যেন মুক্তো ঝড়ে, হাসির সঙ্গে মুখ হতে যে শব্দ বের হয় তা শুনতেও ভালো লাগে। হাসির কারণে অনেক সময় মানুষের কঠিন রোগও সেরে যায়। মানুষ যখন হাসে তখন তার ভেতরে কোনো দুশ্চিন্তা কাজ করেনা বরং তার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। হাসির মাধ্যমে অনেক অসাধ্য সাধন করা যায় সহজেই। অন্যের হৃদয়ে স্থান নেয়া যায়। মানুষ যদি সফল হতে চায়, স্বীকৃতি পেতে চায় তাহলে হাসিই হল অন্যতম একটি উপায়।
হাসলে অন্যায় পর্যন্ত করা যায় না। মানুষ রেগে গেলে, হতাশায় থাকলে, লোভে পড়ে অন্যায় করে কিন্তু হাসলে মানুষের মনে আনন্দ সঞ্চারিত হয় সে নিজেকে সুখী মনে করে, মনে স্বস্তি পায়, তার ভিতরে আনন্দের সৃষ্টি হয় তাই, তার অন্যায় করার ইচ্ছা কমতে থাকে। হাসলে কাউকে কষ্ট দেয়া যায় না। হাসির মাধ্যমে মনের মানুষের অভিমান ভাঙ্গানো সম্ভব। সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে বাড়ি ফেরার পর যদি দেখা যায় বাড়ির সবাই হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে তাহলে কি আর শরীরে ক্লান্তি থাকে? যে পরিবারের সবাই সারাদিন হাসিমুখে থাকে, সে পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি হওয়া কঠিন। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে হাসি প্র্যাকটিস করানোর জন্য লাফিং ক্লাব আছে। বিক্রেতাদের জন্য হাসি হল পুঁজি। যে বিক্রেতার মুখে হাসি থাকে তার বিক্রির পরিমান হয় অনেক বেশি। ক্রেতারা তার দোকানে ভীড় জমায় বেশি।
হাসতে টাকা খরচ হয় না। তাহলে হাসতে দোষ কোথায় ? হ্যাঁ আপনি বলতে পারেন তাহলে কি কারন ছাড়াই হাসব? অবশ্যই না, অকারণে হাসার কোনো দরকার নেই কিন্তু কারন তৈরী করে হাসা হাসি করা কি অসম্ভব কিছু। অতিরিক্ত হাসি আবার সন্দেহের সৃষ্টি করে। হাসির মাধ্যমে শুধু আনন্দই নয় ভালোবাসাও বোঝানো যায়। একটা সুন্দর ভালোবাসা মাখানো হাসি স্বামী-স্ত্রীর সারাদিনের ঝগড়া মেটাতে টনিকের মত কাজ করে। হাসি হল প্রকৃত সুখের আত্বপ্রকাশ। আপনি আপনার পরিবারকে কতটুকু সুখ দিতে পারছেন তা নির্ভর করেেছ আপনি তাদেরকে কতটুকু হাসি-খুশি রাখতে পারছেন। অন্যকে হাসালে নিজের ভেতরও আনন্দের সৃষ্টি হয় এবং তাকে সবাই পছন্দ করে। তবে অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভাল না।
আমরা ছবি তোলার সময় ক্যামেরার সামনে হাসি মুখে দাঁড়াই কেন? কারণ আমরা এমন কোনো ছবি তুলতে চাইনা যা কারো ভালো লাগবে না। তাই সবসময় মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখতে হয় যেন আপনাকে দেখে অন্যেও মাঝেও আনন্দের সৃষ্টি হয়। সুন্দর একটি হাসি একটা মানুষের অমূল্য সম্পদ। “যত হাসি তত কান্না” এ কথাটিকে সত্য মনে করে যদি আপনি গোমরা মুখী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার কপালে কান্না ছাড়া আর কি জুটতে পারে। যে ব্যক্তি সুখী হতে ভয় পায় তার ভিতরে কখনো সুখ আসে না। শিশুদেরকে আমরা সবাই বেশি ভালবাসি ও আদর করি কেন জানেন ? শিশুরা প্রায় সব সময়ই হাসি খুশি থাকে। শিশুরা কেন এত হাসি খুশি থাকে ? কারণ তারা বাড়তি চাপ নেয়না। এই পৃথিবীর ইহলৌকিক জাগতিক চিন্তা বাদ দিলে হাসি-খুশি থাকা সময়ের ব্যাপার মাত্র। আসুন এখন থেকে আমরা সকাল বেলা যখনই ঘুম থেকে উঠব সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে খুব সুন্দর একটা হাসি দিয়ে দিনটি শুরু করব।