সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য মূল্যবান ৩০টি টিপস্ নিম্নে দেয়া হলো :-
১. বিয়ে এবং স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক টা কি সেটা আগে ভালো করে বুঝতে চেষ্টা করুন। এই সম্পর্কের গুরুত্ব না বুঝে এই সম্পর্কে জড়ানোটাই পরবর্তীতে জটিলতার সৃষ্টি করে। বিয়ের আগে অবশ্যই দ্বায়িত্বশীল বিবাহিত ব্যাক্তিদের কাছ থেকে বিবাহ পরবর্তী দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য গুলো সম্পর্কে সচেতন হোন। ছেলে এবং মেয়ে দু জনেরই উচিত ভালোবেসে হোক বা পরিবারের পছন্দে হোক বিয়ের আগে নিজের পরিবারের সাথে খোলাখুলি কথা বলা যে, বিয়ের পরবর্তীতে ছেলের বৌ বা মেয়ের জামাইয়ের প্রতি তাদের প্রত্যাশা কি? এবং কিভাবে চললে তারা খুশী হবেন। তাহলে পরবর্তীতে অনেক ক্ষেত্রেই ভূল বুঝাবুঝি কম হবে।
২. বিয়ের পর নতুন নতুন সমস্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারন, বিয়ের পর একেবারে নতুন জীবন। যে জীবন আবার শিশুকাল থেকে শুরু করতে হয়। তাই, প্রথম দুই থেকে পাঁচ বছর শুধুমাত্র শেখার জন্য মন মানসিকতা রাখা উচিত। কারন, বেশিরভাগ জটিলতা এই সময়েই ঘটে থাকে।
৩. আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি করুন। মানুষ তার জীবনসঙ্গীর সব কিছু আবেগ দিয়ে চিন্তা করে বিবেক দিয়ে নয়। তাই, জীবনসঙ্গীর আবেগ কে নিয়ন্ত্রন করা শিখুন কিন্তু জীবনসঙ্গীকে নয়।
৪. বিবাহিত জীবনে রাগ কে সঙ্গে নিয়ে বিছানায় যাবেন না। কারন, সারাদিন যতই ঝামেলা হোক না কেন, রাতে দুইজন একসাথে থাকলে সব ঠিক। রাগ করে প্রথমে বিছানা আলাদা, তারপর ঘর আলাদা, তারপর বাপের বাড়ী, তারপর ছাড়াছাড়ি। তাই, দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে একে অপর থেকে আলাদা হবেন না। চেহারা দেখতে ইচ্ছা না করলেও পিঠে পিঠ লাগিয়ে থাকুন। মানসিক ও শারিরীক দুরত্বে কখনোই যাওয়া যাবেই না। কোনোভাবেই না।
৫. যে কোনো বিষয়ে একে অপরের কথা শুনুন। ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে বলুন এবং বুঝার চেষ্টা করুন।
৬. যতটা সম্ভব ভুল ক্ষমা করুন। কারন, আপনার ভুল হলে সেও ক্ষমা করার উছিলা পাবে।
৭. চুপ করে থাকতে শিখুন। বেশিরভাগ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
৮. সদা আনন্দে থাকুন। আনন্দ ভাইরাসের মত, আপনি আনন্দে থাকলে অন্যজনকেও ধরবে।
৯. সবসময় হাসিমুখে থাকুন। কারন, আপনার কান্নার মুল্য সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কেউ দিতে পারবে না।
১০. বিয়ের আগে বাবা-মায়ের বারণ শোনেন নি বলে স্ত্রীর বারণও শুনবেন না তা ঠিক নয়।
১১. অফিসের কাজ বাড়ীতে আনবেন না। বাড়ীর মানুষের কল্যানের জন্যই অফিস। অফিসের জন্য বাড়ী নয়।
১২. বৌকে সময় দিবো না বন্ধুকে? এই ফালতু বিষয় থেকে বের হোন। এই চিন্তা থেকে হতাশার সৃষ্টি হয়। তার চেয়ে বরং একে অপরের বন্ধু হোন। স্বামী-স্ত্রী যদি বন্ধু হয় তাহলে সেই সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য। আপনি সব কিছুই করতে পারবেন কিন্তু বন্ধু বানালে সে মাথায় উঠবে এই সব ভ্রান্ত ধারনা মনে পুষবেন না। দুইজন দুইজনকে ভালোভাবে বুঝলে জীবনটা আরো বেশি সহজ ও উপভোগ্য হবে।
১৩. দ্বায়িত্ব নিতে শিখুন এবং দ্বায়িত্ব পালন করতে সহযোগীতা করুন। আপনি নিজে যদি সবাইকে খুশী করার দ্বায়িত্ব পালন করতে না পারেন তাহলে আপনার জীবন সঙ্গী একা কিভাবে পারবে তা চিন্তা করুন।
১৪. মিথ্যা কথা বলবেন না এবং বাইরের বন্ধুকে ব্যাক্তিগত জীবনে স্থান দিবেন না।
১৫. সারপ্রাইজ দিন, উপহার দিন। দামী হতে হবে এমন চিন্তা করার দরকার নেই। তাকে খুশী করার চেষ্টা করছেন এইটা বুঝাতে পারলেই সম্পর্কটা আরো মধুর হবে।
১৬. সু-সন্তান চাইলে স্বামী স্ত্রীর মাঝে সু-সম্পর্ক রাখতেই হবে। বখাটে, বাজে ও নেশাগ্রস্ত ছেলে মেয়েদের বাবা-মা য়ের সংসার জীবন দেখলেই এ কথার সত্যতা বুঝতে পারবেন।
১৭. সঙ্গীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করুন ছোট খাটো বিষয়ের মাধ্যমে হলেও।
১৮. ছোট খাটো ঝগড়াঁ বিবাদ এড়িঁয়ে চলুন। কি দরকার সময় নষ্ট করার।
১৯. নিজে নিজে ডাক্তার / চিন্তাবিদ সাজবেন না। সমস্যা হলে কয়েকজন সঠিক পরামর্শদাতার কাছ থেকে পরামর্শ নিন।
২০. বিয়ে কোনো ভয়ের বিষয় নয়, সৃষ্টিকর্তার বিধান। তাই, বিয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তা করার চাইতে বড়দের সাথে আলোচনা করুন।
২১. একে অপরের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকুন। ‘বিজনেস ইনসাইডার’ এর প্রতিবেদক এরিন ব্রডউইন এক প্রতিবেদনে লেখেন, ‘মনোবিজ্ঞানীদের মতে যেসব দম্পতি একে অপরের কাছে বেশি কৃতজ্ঞ হন তারা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি কাছাকাছি থাকেন। এমনকি সঙ্গীর কাছে একবার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হলে পরের দু মাস ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করে।’
২২. ঘরের কাজে সহযোগীতা করুন। কে কোন দ্বায়িত্বটা পালন করতে ভালোবাসেন এবং কোনটা করতে ভালোবাসেন না সঙ্গীকে জানান। তারপর দুইজন মিলে স্বিদ্বান্ত নিন। কাজের ক্ষেত্রেও ভালো লাগা, মন্দ লাগাটাকে গুরুত্ব দিন।
২৩. সঙ্গী সম্পর্কে নতুন কিছু জানুন। আমরা অনেকেই মনে করি যে , সঙ্গীর সম্পর্কে আমরা সবকিছুই জানি। বিষয়টা সঠিক নয়। প্রতিটি মানুষের জীবন অসংখ্য তথ্যের সমষ্টি। হঠাৎ করে নতুন কিছু জানার চেয়ে তাকে ভালোবাসার সাথে প্রশ্ন করবেন বিভিন্ন ব্যাপারে। সবকিছুই জানার চেষ্টা করুন, তবে তাড়াহুড়ো করে নয়।
২৪. জীবন সঙ্গীকে তার প্রাপ্য সম্মান দিন। আপনার সঙ্গী, সে শুধুই আপনার এটা সবসময় মাথায় রাখবেন। তার সম্মান মানে আপনার সম্মান কারন আপনার নাম ও জীবনের সবকিছুর সাথে সে জড়িত। আপনি তাকে গুরুত্ব দেয়া মানে আপনি নিজেকেই গুরুত্ব দিলেন।
২৫. সঙ্গীর মৌলিক চাহিদা গুলো ঠিকমতো পূরন হচ্ছে কি না খেয়াল করুন। এটা আপনার নৈতিক দ্বায়িত্ব।
২৬. সঙ্গীর পছন্দ অপছন্দকে গুরুত্ব দিন। আপনি নিজের জন্য যা চান, তার জন্যও তাই করুন।
২৭. চোখ কান খোলা রাখুন কিন্তু সন্দেহবাতিক হবেন না। যে চলে যাওয়ার সে চলে যাবে। অবিশ্বস্ত, চরিত্রহীন কারো সাথে থেকে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যু কামনা করা ঠিক নয়। ভালোবাসা জানালা দিয়ে চলে যাওয়ার জন্য দারিদ্রতা লাগে না, যে চলে যাওয়ার সে প্রাচুর্যতা থাকলেও চলে যায়।
২৮. ধর্মীয় অনুশাসন প্রতিনিয়ত চর্চা করুন এবং প্রতিনিয়ত মেনে চলুন । ধার্মিক মানুষের উপর সৃষ্টিকর্তার রহমত থাকে।
২৯. বিয়ে আপনার জীবনের একটি অর্জন। যে কোনো কিছু অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। একমাত্র ব্যাক্তিগত চেষ্টাই এ সম্পর্ককে বাচিঁয়ে রাখে। এটাকে সংরক্ষন করুন আপনার শরীরের একটা অংশের মত। যেমন, শরীরের অংশ যদি ঠিকমত কাজ না করে তাহলে আমরা চিকিৎসা করাই এবং পচেঁ না যাওয়া পর্যন্ত কেটে ফেলে দেই না।
৩০. সুখী সংসারের প্রত্যেক টি কথা ও ছবি বাইরের মানুষদের বেশি জানানো ঠিক নয়। কারন, মানুষের নজর লাগা খুব খারাপ এবং প্রমাণিত। ইবনে মাজাহ শরীফে, আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমরা বদনজর থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও, কেননা বদনজর সত্য ! ’’