প্রতিটি ফুল জন্ম নেয় সুবাস দেবার জন্য,
প্রতিটি পাখি জন্ম নেয় মুক্ত আকাশে উড়বার জন্য,
আর প্রতিটি মানুষ জন্ম নেয় পৃথিবীকে বদলে দেবার জন্য।
এ পৃথিবীতে দুই শ্রেণীর মানুষ আছে। এক যারা চিন্তা করে জীবন যেমন চলছে চলুক, নতুন কিছু করার দরকার নেই, শুধু খাও, পরো, আর বাচোঁ। দুই, যারা চিন্তা করে পুরাতন অপসংষ্কৃতির, কুসংষ্কারের বেড়াঁজাল ভেঙে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করার, নতুন এক পৃথিবী গড়ার। এক নম্বর শ্রেণীর মানুষ যারা তাদের জীবন যাত্রা হয় সাধারণ মানের, এরা সাধারণত অনুসরণ করে, এবং দ্বিতীয় নম্বর শ্রেনীর মানুষ যারা তারা উন্নত জীবন যাপন করে। এরাই সাধারণত নেতৃত্ব দেয়। এরাই হয় বিখ্যাত। এই চমৎকার পৃথিবীতে আমরা সবাই বড় হতে চাই, সফল হতে চাই, বিখ্যাত হতে চাই, অনেকেই নামকরা নায়ক, গায়ক, চলচিত্রকার, নেতা, ডাঃ, ইঞ্জিঃ হতে চাই। কিন্তু এ সবই হওয়া সম্ভব যদি আপনি জানেন আপনার ভিতর সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত কি এক শক্তি আছে যার দ্বারা আপনি সকল বাধাঁ অতিক্রম করে ছিনিয়ে আনতে পারেন যে কোনো সফলতা হতে পারেন সবার সেরা, জনপ্রিয়, বিখ্যাত।
সৃষ্টির শুরু হতে এখন পর্যন্ত যত মানুষ জন্মগ্রহণ করেছেন তারা সবাই কি সফল হতে পেরেছেন, মনীষী হতে পেরেছেন , বিখ্যাত, প্রখ্যাত হতে পেরেছেন, পারেননি। কারণ একটাই নিজেকে না জানা।
সফলতা প্রতিটি মানুষের জন্মগত অধিকার। প্রতিটি মানুষ সফল হবার উদ্দেশ্যেই জন্মগ্রহণ করে। মহান আল্লাহ পাক এমনিতেই মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত (সৃষ্টির সেরা জীব) বলেননি।
মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন,
“আমি মানুষকে সবচেয়ে সুন্দর আকারে পয়দা করেছি” – সূরা আত-তীন।
তিনি মানুষকে পৃথিবীর সকল বস্তুর উপর প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা দান করেছেন । অবাক করা ব্যাপার হল আমরা কখনো জানতেই চাই না, বুঝতেই চাই না যে উনি কেন আমাদেরকে সৃষ্টির সেরা জীব বলেছেন। মহান আল্লাহ পাক যেখানে সৃষ্টির সেরা জীব বলেছেন তারপরও আমরা কেন অসহায়, হতাশ, ব্যার্থ। এর কারণ একটাই নিজেকে না জানা, মানুষের ক্ষমতা সম্পর্কে অজ্ঞানতা।
নিজের সম্পর্কে না জেনে সারা পৃথিবীর সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা কি সময় নষ্ট ও বোকামীর কাজ নয়।
সফলতা কোন আকষ্মিক ব্যাপার নয়। এই পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই সফলতা কামনা করে। তারপরও কিছু সংখ্যক মানুষের হাতে এটি পৌঁছে যায়। সফলতা হল কয়েকটি সঠিক কাজের ক্রমাগত পুনরাবৃত্তি। সঠিক কাজ করে যেতে থাকলে বা যে কাজটি করছেন তা যদি সঠিক ভাবে সম্পাদন করতে থাকেন তাহলেই পৌছে যাবেন সফলতার দ্বারে। সফলতা মানে ব্যার্থতার অনুপস্থিতি নয়, সফলতা হল চুড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন। পৃথিবীর সকল সফল ব্যক্তিদের জীবন পর্যালোচনা করলে দেখবেন সবচেয়ে লক্ষ্যজনক বিষয়টি হল প্রত্যেক সফল ব্যক্তি, বিখ্যাত ব্যক্তি নিজেরাই তাদের সফলতার রাস্তা তৈরী করে সফল হয়েছেন। সাধারণত প্রতিটি মানুষ তার নিজের ব্যক্তিগত সফলতার জন্য কাজ করে সবচাইতে বেশি। ব্যক্তিগত সফলতা লাভ করার জন্য ব্যক্তিটিকে অবশ্যই সফল গুনাবলীর অধিকারী হতে হবে। সফলতার সংজ্ঞা প্রতিটি মানুষের কাছেই ভিন্ন। সব মানুষই কোন একক বিষয়ে সফলতা চায় না। তাই সফলতা সম্পর্কে অনেক পর্যবেক্ষণ করে তিনটি বিষয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ একমত পোষন করেছেন। তা হল :
১) আপনি যা চান তা অর্জন করাই হল সফলতা।
২) সফলতার কোন গন্তব্য স্থান নেই, এটা একটি ক্রমাগত যাত্রা।
৩) সফলতা তখনই আসে যখন পরিশ্রম ও সুযোগ মিলে যায়।
সফলতা যেভাবেই, যে কারনেই আসুক না কেন আমরা যদি সফলতাটাকে ধরে রাখতে না পারি তাহলে সেই সফলতাটাও একদিন মূল্যহীন হয়ে পড়বে। চাকরী ও কাজের জন্য সার্টিফিকেট দরকার হয়, কিন্তু সফল হবার জন্য কোনো সার্টিফিকেট লাগেনা । লাগে শুধু প্রবল ইচ্ছাশক্তি। সফলতার মূল কারণ হল মানুষের আত্ববিশ্বাস । আত্ববিশ্বাসের সাথে আমাদের শক্তি ও সামর্থ্যের একটা যোগসূত্র আছে। আত্ববিশ্বাস থাকলে শক্তি,সামর্থ্য ও ইচ্ছাশক্তি বেঁড়ে যায় আর তাই সফলতা অর্জন করা খুব কঠিন হয় না। সফলতা আর আপনার মাঝের দুরত্বটাই হচ্ছে ব্যার্থতা, দুরত্ব কমান সফলতাকে কাছে আনুন। ব্যার্থতার অবশ্যই একটি শেষ আছে। রাত যখন গভীর হয়ে আসে, তখন বুঝতে হবে যে ভোর হবার খুব বেশী দেরী নেই। ঠিক তেমনি ব্যার্থতার পরিমান যত বাড়বে চেষ্টার পরিমান ও তত বাড়বে আর সফলতা দৌড়ে চলে আসবে। প্রতিটা মানুষের জীবনে ভাল সময়, খারাপ সময় দুটোই আসে। ভাল সময়ের সবচেয়ে খারাপ দিক হল যে এটা তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় আর খারাপ সময়ের সবচেয়ে ভাল দিক হল যে এটাও তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। সুসময় সবসময় আসেনা ,এটাকে ধরে রাখতে হয়। আপনি যদি বিশ্বের ১০০ মনীষির জীবনী পড়েন তাহলে এমন কোন ব্যক্তি কি পাবেন যাকে সফলতার জন্য কষ্ট করতে হয়নি। সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি পাওয়ার জন্য অনেক সময় দেয়ালে পিঠ ঠেকাতে হয়।
বর্তমান যুগ প্রতিযোগীতার যুগ। কেউ কোনো প্রতিযোগিতায় হঠাৎ করে প্রথম হয়না। তাকে পরিকল্পনা করে অনুশীলন করতে হয়। আমি সফল হতে চাই আমি সফল হতে চাই বলে শুধু চিৎকার করলেই হবেনা। সফল হওয়ার জন্য সুষ্ঠ পরিকল্পনা ও কাজ করতে হবে। সফলতা কখনোই সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়া আসে না। একটি ছেলে পরীক্ষায় ফার্ষ্ট হলে তাকে সবাই সফল বলবে। কিন্তু এর পিছনে রয়েছে তার সুদীর্ঘ পরিকল্পনা ও নিয়মিত পড়াশুনার ইতিহাস। পড়াশোনা না করে হঠাৎ করে ফার্ষ্ট হয়েছে এরকম কাহিনী সিনেমাতেই মানায়। তবে মহান সৃষ্টিকর্তা চাইলে যে কোন অসম্ভবও সম্ভব হতে পারে। কিন্তু ব্যতিক্রম কখনোই উদাহরন হতে পারে না। সফল ব্যক্তি বলতে আমরা তাকেই বুঝি যে, কোনো একটি বিষয়ে অন্য সবার চেয়ে বেশী পারদর্শী এবং সে তার অর্জন ধরে রাখতে সক্ষম।
বিখ্যাত ব্যক্তি মানেই সফল ব্যক্তি কিন্তু, সফল ব্যক্তি মানেই বিখ্যাত ব্যক্তি নয়। বিখ্যাত ব্যক্তি সেই হতে পারে যে ক্রমাগত অধিকাংশ কাজে সফলতা লাভ করে। কারন সফলতা সফলতার জন্ম দেয় আর ব্যার্থতার জন্ম দেয় ব্যার্থতার। সফলতা আর ব্যার্থতা হল একই মুদ্রার এপিঠ -ওপিঠ। সফলতার মানে হল “একটু বেশী”। একটু বেশী সম্মান, একটু বেশী জনপ্রিয়তা, একটু বেশী ভাল ফলাফল, একটু বেশী ভালোবাসা, ঠিক একই রকম কথা সফল ব্যক্তিদের বেলায়ও সত্য।
সফলতা সেটাই যা সবার জন্য গৌরব বয়ে আনে। শুধু সফলতাই নয় চাই সার্থকতা। কারণ আমাদের আশে-পাশে এমন অনেক মানুষকেই দেখি যারা তাদের কর্মজীবনে অনেক সফল কিন্তু পারিবারিক বা সাংসারিক জীবনে ব্যার্থ। আবার অনেক দুশ্চরিত্র, দুর্নীতিবাজ, দুষ্ট লোককেও সফল হতে দেখি। একজন সফল ব্যক্তি সার্থক নাও হতে পারে কিন্তু একজন সার্থক ব্যক্তি অবশ্যই সফল। মিডিয়ার কারনে অনেক মানুষকেই সফল মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে তাদের কোনো বড় অর্জন বা সার্থকতা নেই। তারা প্রচারে সফল কিন্তু সার্থক নন।
স্কুল লাইফ থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল যে বড় হয়ে আমি Ph. D করব। গুলশান বনানীতে এপার্টমেন্ট থাকবে, দামী গাড়ি, চাকর-বাকর সবকিছু থাকবে, হাই স্ট্যাটাস নিয়ে চলব, কিন্তু বড় হবার পর আমার এসব কিছুই হচ্ছিল না । আমি অনেক মনোকষ্ট নিয়ে দিন কাটাতাম পরবর্তীতে চাকরী জীবনে প্রবেশ করার পর আমার সাথে এ রকম অনেকের পরিচয় হয় যাদের এ সব কিছুই আছে। কিন্তু তাদের পরিবারে শান্তি বলতে কিছুই নেই। পারিবারিক জীবনে শান্তি না থাকলে সফলতারও কোন আনন্দ থাকেনা। মানুষকে দেখানোর জন্য সফল হয়ে কোনো লাভ নেই। মানসিক অশান্তিতে থাকলে সফলতা তখন বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। সফল হতে গিয়ে কখনো বিবেকের বোঝা মাথায় চাপাবেন না। এমন সফল হয়ে লাভ কী যদি বিবেকের তাড়নায় কোন শক্তি না পান। এমন অর্থ সম্পদ থেকে লাভ কী, যদি রাতে ঘুম না আসে।
সফলতা সেটাই যা সবার জন্য আনন্দ ও শান্তি বয়ে আনে। আমার বক্তব্যের ভূল অর্থ করবেন না। নিঃস্বন্দেহে আমাদের সবারই সফলতা দরকার কিন্তু সেটা যেন সার্থক হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
1 comment
valo laglo