পৃথিবীতে মানুষ সফল না হবার অন্যতম কারনই হচ্ছে ভয়। পৃথিবীতে প্রাচীনকাল থেকে সংখ্যালঘিষ্ঠ মানুষ সফল হত এখনও তাই। এর কারণ কি ? কারণ পরিবেশ যতই উন্নত হোক সুযোগ সুবিধা যতই উন্নত হোক। যতদিন পর্যন্ত একটি মানুষ তার ভয়কে জয় করতে না পারবে ততদিন পর্যন্ত তার সফলতা অনিশ্চিত। এ পৃথিবী সাহসীদের দখলে, যে যত সাহস দেখাবে, বীরত্ব দেখাবে বিজয়ের জয়মালা তার গলায়ই যাবে। ভীরুদের জন্য এখানে শুধু অবহেলা, দুঃখ ছাড়া আর কিছুই নেই। সহজ সরল হওয়া আর ভীরু-কাপুরুষ হওয়া এক নয়। সহজ সরল হওয়া ভাল কিন্তু ভীরু-কাপুরুষ হওয়া ভাল নয়। বেশির ভাগ ভয়ের সৃষ্টি হয় নানা প্রকার সন্দেহ থেকে।
সাধারণত বেশিরভাগ মানুষ যে সকল ভয়ের কারণে সফলতা পায়না তা দেয়া হল।
১) দ্বারিদ্রের ভয়।
২) সমালোচনার ভয়।
৩) অসুস্থতার ভয়।
৪) ব্যক্তি বা ভালোবাসা হারানোর ভয়।
৫) বয়ষ্ক বা বার্ধ্যক্যের ভয়।
৬) ব্যার্থতার ভয়।
এছাড়াও আরো অনেক ভয় আছে যা আমাদের প্রতিনিয়ত ক্ষতি করে চলেছে।
১) দ্বারিদ্রের ভয়ঃ দ্বারিদ্রের ভয় কিছুই না শুধুমাত্র মানুষের চিন্তার একটি স্থির অবস্থা মাত্র। কিন্তু একটি মানুষের লক্ষ্য, ক্ষমতা, সার্বিক উন্নতি ধংস করার জন্য এই একটি ভয়ই যথেষ্ট। অর্থ কখনোই কারো নয়। যতক্ষন পর্যন্ত এটাকে ধরে রাখা যায় ততক্ষন তার। টাকা আবিষ্কারের পর থেকেই এটাকে নিয়ে চলে যুদ্ধ, হতাশা, দুঃখ, কষ্ট ইত্যাদি। অর্থ অর্জন করতে কষ্ট করতেই হয়। হয় আপনার বাবা করেছেন, নয় আপনার দাদা করেছেন আর না হলে আপনি করছেন। কষ্ট সবাইকে করতে হবে। দ্বারিদ্রের ভয়ে অনেক সময়ই মানুষ দুর্নীতি করে। ভবিষৎ দ্বারিদ্রের ভয়ের কারণে মানুষ টাকা হাত ছাড়া করতে চায় না।
২) সমালোচনার ভয় ঃ পৃথিবীতে এমন কোন বিখ্যাত ব্যক্তি আপনার জানা আছে কি যাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়নি। সমালোচনা তারই হয়, যার দ্বারা সাধারণ মানুষের লাভ বা ক্ষতি হওয়া সম্ভব। কোন সাধারণ মানুষকে নিয়ে সমালোচনা করা হয় না । এটা এমন একটি ভয় যার দ্বারা মানুষ ধুঁকে, ধুঁকে মরে। অনেকেই নিজের অন্তর্গত প্রতিভাকে প্রকাশ করেনা এই ভয়ের কারনে। এই ভয় কোন ভাবে একবার মন থেকে মুছে ফেলতে পারলে বিখ্যাত হওয়া শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার। সমাজের নিচু শ্রেনীর মানুষরাই বেশিরভাগ সমালোচনা করে। সমালোচন সেই করে যার হাতে অনেক অলস সময় আছে। সমালোচনা কখনো কোন বন্ধু সৃষ্টি করতে পারেনা শুধু শত্রুই সৃষ্টি করে।
একজন বিখ্যাত ব্যক্তি বলেছেন,
প্রথম শ্রেণীর মানুষেরা বড়, বড় চিন্তার ও কাজের কথা বলেন।
মধ্যম শ্রেনীর মানুষেরা শুধু নিজেদের কথা বলে।
নিচ শ্রেণীর মানুষেরা শুধু অন্যের কথা বলে।
আসলেই যার নিজের কোনো উল্লেখ করার মত কথা নেই, কাজ নেই, সেই ত অন্যের কথা বলে। অন্যের সমালোচনাকারী কখনোই ভাল মানুষ হতে পারে না। যে আজকে আপনার কাছে অন্যের সমালোচনা করছে আগামীতে সে অন্যের কাছে আপনার ব্যাপারেও সমালোচনা করবে। বিখ্যাত হতে হলে, নামী-দামী হতে হলে সমালোচনা- আলোচনা সহ্য করার মত ক্ষমতা থাকতে হবে।
৩) অসুস্থতার ভয় ঃ পৃথিবীতে কখনো এরকম মানুষ জন্মেছে যার কখনো কোন অসুখ হয়নি। আজকে প্রচন্ড রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, আজকে মানুষের ভীড়, ট্র্যাফিক জ্যাম, এসব থাকলে আমার শরীর খারাপ হবে। যারা এ সকল চিন্তা বেশি করেন তারা প্রচন্ড রকম মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার শিকার হন। যে কোন মেশিন চালু থাকলেও নষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকে। আমাদের শরীরটাও ঠিক সেই রকমই একটা যন্ত্র স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার দ্বারা তৈরী। আপনি চান বা না চান আপনি কখনোই আপনার শরীরকে বছরের পর ঠিক একই রকম রাখতে পারবেন না। শরীরে কর্মক্ষমতার একটা শেষ আছে। তাই এই কর্মক্ষমতাকে সঠিক সময় সঠিক ভাবে ব্যাবহার না করে অলস সময় সময় পার করলে জীবন মূল্যহীন হয়ে যায়।
৪) ব্যক্তি বা ভালোবাসা হারানোর ভয় ঃ এই ভয়টা একটা মানুষের সুখ, শান্তি, উন্নতি এমনকি জীবন পর্যন্ত ধ্বংস করার মত ক্ষমতা রাখে। যে ধরে রাখতে জানে না তার কাছে কিছুই থাকে না। এই ভয়টি এক সময় মারাত্মক মানসিক অসুস্থতা হয়ে যায়। এই ভয় পেলে মানুষ অনেক ধরনের উল্টাপাল্টা কাজ করে বসে, সে অস্বাভাবিক আচরন শুরু করে ঘুমায় না, খায় না ইত্যাদি। এই ভয় পেলে মানুষ অন্যায় কাজ করতেও পিছপা হয়না। একটা কথা সবার মনে রাখা দরকার। এই পৃথিবীতে কেউ কখনোই তার প্রিয়জনকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারে না। অনেক সময় হয়ত সেই প্রিয়জনের সাথেই চলে যেতে হয় । এটাই স্বাভাবিক এবং এটাই বাস্তবতা।
৫) বয়ষ্ক বা বার্ধক্যের ভয় ঃ ত্রিশ বছর পার হবার পর থেকেই মানুষের ভিতরে বুড়ো হবার ভয় বাড়তে থাকে। আশে-পাশের ছোট ছেলে মেয়েরা ভাইয়া আপুর বদলে ‘আঙ্কেল’ , ‘আন্টি’ ডাকা শুরু করে। একজন মানুষ যতক্ষন সুস্থ আছে, কর্মক্ষম আছে, ততক্ষণ সে যুবক। বুড়ো হওয়ার বিষয়টা শারীরিকের চেয়ে মানসিক প্রভাবটাই ফেলে বেশী। বয়সত সবারই বাড়ে ত কি হয়েছে। মৃত্যু কি শুধু বুড়ো মানুষের হয়, যুবকদের কি হয়না ? মরার আগে মরে লাভ কি? গঠন মুলক কিছু করা যায় কিনা সেই চিন্তা করা দরকার।
৬) ব্যার্থতার ভয় ঃ অনেকে ব্যার্থতাকে এতটাই ভয় পায় যে সে কোন বড় কাজ করতেই চায় না, কোনো প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে চায় না। সবসময় পিছনের সারিতে বসে থাকতে এবং এক টেবিলে কাজ করতেই ভালবাসে।
যুক্তরাষ্টের সংগীত শিল্পী ‘জন বন জোভি‘ বলেছেন।
“ব্যার্থতা হলো একজন মানুষের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। কিন্তু তাই বলে কারও উচিত নয় এটাকে ভয় পাওয়া বরং এটাই তোমাকে শিক্ষা দেবে, শেখাবে নিজের ও অন্যের অনেক কিছু। আমরা সবাই জীবনের অনেক কাজেই বিফল হই কিন্তু তা হতে পরিত্রান নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।”