নিজেকে জানো বিষয়টি কি ?
নিজেকে জানো বিষয়টি হল নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সবদিক দিয়ে জানা। আমরা কে, কোথা থেকে এসেছি, কোথায় যাব, এই সকল সমজাতীয় প্রশ্নের সমাধানই হল নিজেকে জানা।
আমরা কোন শরীর নই, আমরা কোন মানসিক বিষয় নই, আমরা কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নই। আমরা বলি ‘এইটা আমার ব্রেইন’ এর মানে অন্য কিছুৃ আমাদের ব্রেইনকে পরিচালিত করছে। আমরা শুধু আমাদের শরীরকে “ DNA” সহ অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত করতে পারি। তাহলে আমরা কে? এই প্রশ্নের উত্তর হল নিজেকে জানা।
যখন আমরা জেগে থাকি, তখন ভিতরে একজনকে অনুভব করি আর যখন ঘুমিয়ে পড়ি তখনও সে সজাগ । যখন আমরা মারা যাব তখনও সে থাকবে। কারণ আমাদের দেহের মৃত্যু আছে, কিন্তু রুহের মৃত্যু নেই। একমাত্র সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা ছাড়া।
কেন জানতে হবে – কারণ নিজের জীবনের উদ্দেশ্য জানার জন্য। কেন আমাকে এই পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে? এত মানুষের ভীড়ে আমাকে না প্রেরন করলেও চলত। যদি আমাকে কোন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রেরন হয়েছে তাহলে কি সেই উদ্দেশ্য? আর আমি কি সেই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কাজ করছি নাকি অবহেলায় সময় নষ্ট করছি?
কিভাবে জানতে হবে- নিজেকে জানতে হলে প্রচুর পরিমানে পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের প্রয়োজন। অবশ্যই সেটা নির্দিষ্টভাবে হতে হবে। বেশির ভাগ সময় আপনার একটি পথ নির্দেশক প্রয়োজন, সে হতে পারে আপনার নিজস্ব ধর্ম অভিজ্ঞ ব্যক্তি। যিনি এ সম্পর্কে সুষ্পষ্ট জ্ঞান রাখেন। কারণ ধর্ম থেকেই এই বিষয় সম্পর্কে ভাল ও সঠিক ধারনা লাভ করা সম্ভব। বিজ্ঞান এর তেমন কোন শক্তিশালী ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। বিজ্ঞান তারই ব্যাখ্যা দেয় যা দেখা যায়, সংরক্ষণ করা যায়, পর্যবেক্ষন করা যায়, আলাদা করে রাখা যায়, সর্বপরি ব্যাখ্যা করা যায়। নিজেকে জানা এটা সত্যিকার অর্থে অনুভব করার বিষয়। শুধুই অনুভবে কাজটি করতে সঠিক পথ নিদের্শক চিহ্নিত করা খুবই গুরুত্তপূর্ণ। কারণ সঠিক পথ নিদের্শক ছাড়া এটার পরিচয় জ্ঞান লাভ করা দুঃসাধ্য। নিজেকে জানতে হলে পরিশুদ্ধ জীবনের নিয়মাবলী অনুসরণ করতে হবে।
কখন জানতে হবে? : – সত্যিকার অর্থে নিজেকে জানার জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। এটা নির্ভর করে তার বুদ্ধিমত্তার উপর। যখন কারো ১৬ বছর হবে তখন থেকেই সে এ সকল বিষয় জানার জন্য উপযুক্ত। যদি আপনি ভাগ্যবান হয়ে থাকেন তাহলে নিজেকে জানতে আপনার একদিন লাগতে পারে নয়ত বা দিনের পর দিন লাগতে পারে।
নিজেকে জানা অতি গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান। এই জ্ঞান অর্জিত হলে ভূলে যাওয়া সম্ভব নয়। নিজেকে জানা প্রতিটি ছেলে, মেয়ে, যুবক, বয়ষ্ক সবার জন্যই অতীব জরুরী।
কেন জানা জরুরী-
১। জীবনের উদ্দেশ্য জানার জন্য, বুঝার জন্য।
২। লক্ষ্য পূরণ করার জন্য।
৩। নিজের অন্তর্নিহিত শক্তি উপলদ্ধি করার জন্য।
৪। সঠিক ও বাস্তব সত্য উতঘাটন করার জন্য।
৫। অন্য সকল মানুষকে ভাল করে বোঝা ও চেনার জন্য।
৬। মহান সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি সম্পর্কে ধারণা লাভ করার জন্য।
৭। সকল প্রকার হতাশা দুর করার জন্য।
৮। আত্ব-বিশ্বাস বৃদ্ধি করার জন্য।
৯। জীবনের মূল্যবান সময়কে কাজে লাগানোর জন্য।
কিভাবে জানা যাবে তিন ধরণের তথ্য জনার মাধ্যমে আমরা নিজেদের সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারি।
১) শারীরিক তথ্য।
২) সামাজিক তথ্য।
৩) মনস্তাত্ত্বিক তথ্য।
শারীরিক তথ্য- শারীরিক দিক বিবেচনা করে নিজের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা তুলনা মূলক সহজ। কারণ আমাদের শরীর দৃশ্যত। মানুষের ওজন, উচ্চতা, শক্তি মেপে অনেক ধারণা লাভ করা যায়।
সামাজিক তথ্য- সমাজের অন্য সব মানুষের সাথে আমার কি মিল আর অমিল, আমার সম্পর্কে তাদের অভিমত এ সকল তথ্য জানার মাধ্যমে সমাজে আমাদের গুরুত্ব নির্ণয় করতে পারি।
মনস্তাত্তিক তথ্য- এটা তুলনামূলক কঠিন। কারণ এর জন্য প্রচুর জ্ঞান প্রয়োজন। একটা মানুষ জন্মের পর থেকেই তার বিভিন্ন পরিচয় শুরু হয়। যেমন- ছেলে, বাবা, ভাই, চাচা, ফুপা, শালা, দুলাভাই, দাদা, নানা, ইত্যাদি। একেক পরিচয়ে একেক আচরণ কিন্তু ব্যক্তি একজনই , নিজের অন্তর্নিহিত শক্তি গুলোকে সক্রিয় করার ক্ষমতা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা জরুরী।
“প্রত্যেক মানুষের তিন প্রকারের চরিত্র আছে- যা সে প্রকাশ্যে দেখিয়ে বেড়ায়, যা সত্যিকারের আছে এবং যা সে মনে করে যে তার আছে” – আলফাঁসোকার।
এই দুটি বিষয়ের মাঝে বিরাট পার্থক্য-
Who I Am? – আমি কে?
What do I think I am ? – আমি নিজেকে কি মনে করি ?
আত্মজিজ্ঞাসা আর আত্মজ্ঞান অতি দরকারী জিনিস। এটা না থাকলে বা এর সাহায্য ছাড়া আমাদের নিজেদের কাছ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ জিনিসটি আদায় করতে পারবেন না।
প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়, আমরা যা পাই তার বেশি পেতে পারতাম শুধু নিজেদের সম্পর্কে যদি আরও কিছু জানা থাকত। সাধারণভাবে জীবনযাপন করা ভাল। কিন্তু কারো কাজে না আসাটা কি ভাল ? প্রতিভা ও জ্ঞানের আসল উদ্দেশ্যই হল অপরের কাজে আসা।
কিছু কিছু বোকা লোক পাওয়া যায়, যারা নিজেদের সম্পর্কে খুব ভালো করে জানে, কিন্তু তারা নিজেদেরকে প্রতিভাবান ভাবতেই গর্ববোধ করে, কিন্তু প্রতিভাকে কাজে লাগায় না।
আপনি নিজেকে ভালো করে দেখুন । যতোটা সম্ভব জানতে চেষ্টা করুন। নিজে কিভাবে চিন্তা করেন, কিভাবে আর কেন আপনি কাজগুলো করেন। আপনার নিজের ভালো দিক, খারাপ দিক গুলো ভাল করে জানতে চেষ্টা করুন। আপনার প্রতিভা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন।
কথায় আছে ঢাল তলোয়ার ছাড়া যুদ্ধ করা যায় না । আপনার ভিতরই আছে ঢাল, আপনার ভিতরই অছে তলোয়ার, এবার যুদ্ধে নেমে যাওয়ার পালা, লড়াই না করলে আপনি কি করে নিজেকে ভালো সৈনিক হিসেবে প্রমানিত করবেন ?