জীবনে সফল হবার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দৃষ্টি ভঙ্গি। শুধুমাত্র একটি সুসম্পন্ন হ্যাঁ বোধক দৃষ্টি ভঙ্গিই আপনাকে সবার সেরা করে তুলতে সক্ষম।
হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের উইলিয়ম জেমস বলেন, আমাদের প্রজন্মের সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার হল এই যে, মানুষ তার মনোভাবের পরিবর্তন ঘটিয়ে তার জীবনযাত্রার পরিবর্তন ঘটাতে পারে।”
মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি দু রকম।
১) হ্যাঁ বোধক দৃষ্টিভঙ্গি (+)
২) না বোধক দৃষ্টিভঙ্গি (-)
হ্যাঁ বোধক দৃষ্টিভঙ্গি হল পৃথিবীর সমস্ত ভাল কিছু যোগ করা। আর না বোধক দৃষ্টিভঙ্গি হল পৃথিবীর সমস্ত ভাল কিছু বিয়েগ করা। হ্যাঁ বোধক দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ হল সেই ব্যক্তি যে জানে, মানে আর বিশ্বাস করে যে তার দ্বারাই সম্ভব। না বোধক দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ হল সেই ব্যক্তি যে জানে, মানে তার বিশ্বাস করে, যে তার দ্বারা সম্ভব নয়, সে পারবেনা, সে পারেনা ইত্যাদি।
আরো সহজ করে বুঝার জন্য বৈশিষ্ট্য গুলো তুলে ধরা হলঃ
পজেটিভ দৃষ্টিভঙ্গি
১) যে সকল বিষয় মানুষকে শান্তি দেয়, আনন্দ দেয়, সুখ দেয়।
২) যে সকল চিন্তা মানুষের জীবনকে ইন্নত করে।
৩) যে সকল কাজ সবার জন্য ভাল ও সম্মানজনক।
৪) সু-সম্পর্ক সৃষ্টি করে।
৫) ভবিষৎ সুন্দর করে।
৬) সংসার টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
৭) আশার সঞ্চার করে।
৮) মানুষকে বিশ্বাস করা।
নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গি
১) যে সকল বিষয় মানুষকে দুশ্চিন্তায় ফেলে, কষ্ট দেয়, ধংস করে।
২) যে সকল চিন্তা মানুষকে নি¤œস্তরে টেনে আনে।
৩) যে সকল কাজ অন্যের ক্ষতি করে ও অসম্মানজনক।
৪) খারাপ সম্পর্ক সৃষ্টি করে।
৫) ভবিষৎ অন্ধকার ও নষ্ট করে।
৬) সংসার বিছেদ ও কষ্ট ডেকে আনে।
৭) দুশ্চিন্তা, হতাশার সৃষ্টি করে।
৮) সব সময় আশে-পাশের মানুষকে অবিশ্বাস করা।
জীবনে সফলতার শীর্ষে আরোহন করতে হলে হ্যাঁ বোধক দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী হতে হবে। আর হ্যাঁ বোধক দৃষ্টি ভঙ্গি যাদরে থাক তাদেরকে হ্যাঁ বোধক বা পজেটিভ ব্যাক্তিত্বর অধিকারী বলা হয়। বিখ্যাত জনপ্রিয় মানুষের ভালবাসার পাত্র হতে হলে আপনাকে অবশ্যই পজেটিভ ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হভে। এর কোন বিকল্প নেই। সৃষ্টিকর্তা পজেটিভ কিন্তু, শয়তানের কর্মকান্ড নেগেটিভ।
পজেটিভ ব্যক্তি চেনার উপায়:
১) যিনি সবসময় উজ্জল ভবিষৎ এর কথা বলে।
২) সবসময় হাসিমাখা মুখ।
৩) নেগেটিভ কথা কানে নেয় না।
৪) সবার সাথেই মিশে।
৫) কারো সাথেই খারাপ আচারণ করে না।
৬) মানুকে ভাল উপদেশ দেয়।
৭) ভূল করলে নিজের ভূল স্বীকার করে।
৮) যেকোন কিছুর ভাল দিকটা আগে দেখে।
নেগেটিভ ব্যক্তি চেনার উপায়ঃ
১) সব সময় খুঁত ধরে।
২) অন্যের সমালোচনা কর খুব মজা পায়।
৩) মনে, মনে নিজেকে অনেক ছোট মনে করে কষষ্ট পায় কিন্তু বাইরে বড়, বড় কথা বলে।
৪) কারো ভাল সহ্য করতে পারে না।
৫) যে কোন কিছুর খারাপ দিক বের করে সবার আগে।
৬) কখনো নিজের ভূল স্বীকার করে না ।
৭) সারা দিন উল্টাপাল্টা চিন্তা করে আর ঝগড়া করে।
৮) সব সময় সবজান্তা মনোভার কারো কথা মানতে নারজ।
৯) সব সময় সবকাজে সন্দেহ করা।
১০) অন্যের উপর দোষ চাপানো।
১১) কখনো কারো ভাল কথা নিতে চায় না , সে মনে করে সে সবার চেয়ে ভাল।
১২) কোনো কিছুতেই সন্তুষ্ট নয়।
হ্যাঁ বোধক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টিশীল আর না বোধক দৃষ্টিভঙ্গি ধবংসশীল। একটি পাগল ব্যক্তি যেমন মনে করে যে সে পাগল নয়, তেমনি একটি নেগেটিভ ব্যক্তি ও মনে করে সে নেগেটিভ নয়।
যারা নেগেটিভ তারা যুদ্ধের ও ঝগড়ার মাধ্যমে মীমাংসা করতে চায়। আর যারা পজেটিভ তারা শান্তির মাধ্যমে মীমাংসা করতে চায়।
“ধর্মের সকল পজেটিভ দিকই শয়তানের কছে নেগিটিভ।” একজন নেগেটিভ মানুষ কখনোই শান্তি প্রিয় হতে পারেনা, হয় না।
কিভাবে বুঝবেন যে আপনি কোন দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী ?
এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানলেই আপনি বুঝতে পারবেন।
১) আপনি কি হীনমন্যতায় ভোগেন ?
২) আপনি কি বেশি টেনশনে ভোগেন ?
৩) একটি মানুষকে দেখার পর, প্রথমেই কি তার খুঁতগুলো আপনার চোখে ধরা দেয় ?
৪) আপনি কি মানুষের ভূল, খারাপ দিক নিয়ে বেশি কথা বলেন.?
৫) আপনার কি আশে-পাশের মানুষ, বন্ধু-বান্ধবদের, ভাই-বোনের সাথে প্রায়ই ঝগড়া হয় ?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি হ্যাঁ হয় বা আপনি দ্বিধাগ্রস্থ হন তাহলে আপনি নেগেটিভ পারসোনালিটি আর যদি না হয় তাহলে পজেটিভ পারসোনালিটি।
কথায়, কথায় খুঁত ধরা, সন্দেহ করা খুুব ভয়ানক ধরনের মানসিক রোগ, সকল প্রকার হ্যাঁ বোধক চিন্তার অধিকারী ব্যক্তিকেই আমরা সুস্থ বলে থাকি। মানুষের চিন্তার সাথে দেহের অত্যন্ত নিবীড় সম্পর্ক আছে। নেগেটিভ চিন্তা থেকেই টেনশন এর জন্ম। তাই যারা বেশি টিনশন করে তারা অবশ্যই নেগেটিভ পারসোনালিটি।
যদি কোন মানুষ তার খারাপ দিক গুলোকে চিহ্নিত করতে না পারে, তাহলে বুঝতে হবে যে সে তার খারাপ দিকগুলোকে এড়িয়ে চলছে বা সে তার খারাপ দিক গুলোকেই ভালোবাসতে শুরু করেছ। অনেক বোকালোক আছে যারা তাদের খারাপ দিকগুলোকেই তাদের শক্তি বলে মনে করে, তারা ভালো হতে ভয় পায়, ভালো লোক দেখলে অস্বস্তি বোধ করে।
খারাপ কাজের পরিনাম যদি খারাপ হয়, তাহলে আপনার পারসোনালিটির খারাপ দিকগুলোর পরিনামও খারাপ হবে।
বিজয়ী মনোভাব/ যা হয়েছে ভালো হয়েছে :
ধরুন, রনি ও জনি দুই ঘনিষ্ট বন্ধু। তারা এক দৌড় প্রতিযোগীতায় অংশ নিল। দেখা গেল রনি বন্ধুটি প্রথম হল আর জনি কিছুই হল না। এখন যেহেতু রনি প্রথম হয়েছে, জয়ী হয়েছে সুতরা ং তার মাঝে জয়ের সুখ বিরাজ করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জনির মনের অবস্থা দুই রকম হতে পারে।
১) চিরাচরিত খারাপ, দুঃখের কষ্টের,হতাশার ব্যার্থতার।
২) জনি ভাবতে পারে, যা হয়েছে ভালোই হয়েছে, আসলে রনির মানসিক শারীরিক, পারিবারিক, সামাজিক অবস্থা আমার মত না। ও যদি হেরে যেত তাহলে দ্বিতীয়বার হয়ত প্রতিযোগিতায় অংশ নিত না। কিন্তু আমি ত ওর চেয়েও অনেক বেশি সাহসী, আমার সাথে আমার পরিবারের, বন্ধুদের সহযোগীতা আছে, আমি এর পরেরবার অংশ নিব এবং প্রথম হব আর যদি নাও হই তাহলেও কোন সমস্যা নাই। আমি জীবনের দৌড়ে ওর চেয়ে এগিয়েই থাকব। রনিকে জেতার সুযোগ করে দিয়ে আসলে আমিই জিতেছি।
দ্বিতীয় দৃষ্টিভঙ্গি কি চমৎকার বিজয়ী মনোভাব প্রকাশ করেনা ?
প্রেমের ক্ষেত্রেও এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি খুব কাজে দেয়।
ধরুন আপনার ভালোবাসার মানুষটি “Mr.X” আপনাকে ধোঁকা দিয়ে বা যে কোন করানেই হোক ছেড়ে চলে গেছে। তাহলেও আপনার দৃষ্টিভঙ্গি দৃই রকমের হতে পারে।
১) প্রচন্ড দুঃখে ভেঙ্গে পড়তে পারেন, দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে ইত্যাদি।
২) আপনি ভাবতে পারেন, যা হয়েছে, ভালোই হয়েছে, “Mr.X” কে বিয়ে করার পর যদি সে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে তাহলে তো আরও খারাপ হত “Mr.X” আসলে আপনার মত মানুষের ভাে লাবাসার যোগ্য ব্যক্তি ছিল না। সে আপনার অনেক রকমের ক্ষতি করতে পারত। সুযোগ নিতে পারত, মহান সৃষ্টিকর্তা আপনাকে রক্ষা করেছেন “Mr.X” কে দেয়ার মত অনেক ভালোবাসা আপনার মাঝে ছিল, কিন্তু “Mr.X” অবুঝ, অজ্ঞ ও মুর্খ সে তা না নিয়েই চলে গেছে। যা হারিয়েছে “Mr.X” হারিয়েছে, আপনি হারাননি। আপনার সবকিছু আপনার কাছেই আছে। ভালোবাসা সময়ের মত না, যা চলে গেলে আর আসে না এটা সব সময় আমাদের মনে থাকে অনন্তকাল, চিরন্তন। সুতরাং “Mr.X” হেরে গেছে তাই চলে গেছে আর আপনি বিজয়ী। আপনি যতক্ষন পযন্ত কষ্টকে গ্রহণ না করছেন ততক্ষন পর্যন্ত আপনাকে কেউ কষ্টে ফেলতে পারবেনা।
একটা মাত্র জীবনে কতবার হারবেন ? আমরা বিজয়ী হবার জন্যই জন্মেছি হয়ত কেউ আগে হয় বা কেউ পরে।