ঝগড়া অতি সুপরিচিত একটি বিষয়। এ সুন্দর পৃথিবীর সুন্দর অভিবাসীদের সবচেয়ে নিকৃষ্ট আচরনের অন্যতম হল ঝগড়া। এটা এমনই বিষয় যা কখনো কারো মঙ্গল বয়ে আনেনা এবং আনবেও না। ঝগড়া শুধু ক্ষতি করে। বাবা – মার মাঝে ঝগড়া, ভাই- বোনের মাঝে ঝগড়া, রাস্তাঘাটে নিজেরাও ঝগড়াটে হয়ে যাই। ঝগড়া থেকেই বাঁধে যুদ্ধ, মারামারি। বিখ্যাত মানুষরা কেউ ঝগড়া করে সময় নষ্ট করেছে বলে শোনা যায়নি। কারণ ঝগড়া করে কখনোই সম্মানিত, বিখ্যাত হওয়া যায় না। আমাদের জীবনটা কিছু সময়ের তাই এটা এত দামী। ঝগড়া করে জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করাটা চরম বোকামী।
ধরুন, আপনার এলাকায় এক ঝগড়াটে লোক থাকে, দিন রাত যার- তার সাথে ঝগড়া করাই তার স্বভাব। মানুষ তাকে ভয় পায় অপছন্দ করে, পিছনে বাজে কথা বলে, এড়িয়ে চলে। আপনি কি তাকে ভাল বলবেন ? কোনো ঝগড়াটে দোকানদারের দোকানে কাষ্টমার বেশি যায় নাকি যার ব্যাবহার ভাল তার দোকনে মানুষ বেশি যায়। আপনি কি জেনে শুনে কোনো ঝগড়াটে পুরুষ বা মহিলাকে বিয়ে করবেন ? কোনো ঝগড়াটে ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবেন ?
শতকরা ৯০ ভাগ ডিভোর্সের কারণ হল ঝগড়া। দিন রাত ঝগড়া করলে সংসারে তিক্ততা আসে, ধরে ভাঙ্গন। এক ঘর থেকে পাশের ঘর, তারপর বাপের বাড়ী এবং অবশেষে ছাড়াছাড়ি। ঝগড়াতে কেউ কখনো জয়লাভ করেনা। অর্থ হোক, সম্মান হোক কিছু না কিছু হারাবেই।
আমরা সাধারণত কাদের সাথে ঝগড়া করি ? বেশির ভাগ সময়ই আপনজনদের সাথে কিন্তু কেন ? ঝগড়া করার মূল লক্ষ্য থাকে অপরকে কষ্ট দেয়া। ঝগড়া করা পশুর স্বভাব কারণ পশুরা ভাল ব্যাবহার বোঝে না কিন্তু ঝগড়া, মারামারি ঠিকই করতে পারে।
সব সময়ই দেখা যায় খুব সামান্য ব্যাপার থেকেই ঝগড়া শুরু হয়। তাই ঝগড়া করার সময় একটু থেমে চিন্তা করুন যে এটা কি সত্যি জরুরী এতে কি আমার কোন লাভ হবে । এ প্রশ্নের উত্তরই আপনাকে বলে দিবে আপনার কি করা উচিত। ঝগড়া থেকে বাঁচার অন্যতম উপায় হচ্ছে ঝগড়া এড়িয়ে চলা। ঝগড়াতে আবার রকম ফের আছে, যেমন শিক্ষিত মানুষের ঝগড়া এক রকম আবার অশিক্ষিত মানুষের ঝগড়া এক রকম। ছেলেদের একরকম, আবার মেয়েদের একরকম। শিশুদের একরকম আবার বড়দের একরকম। ঝগড়া যেরকমই হোক এর পরিনাম খারাপই হয়।
আমি আমার এ ছোট্ট জীবনে একটি জিনিস শিখেছি আর তা হল আপনি না চাইলে কেউ আপনার সাথে ঝগড়া করার সুযোগ পাবে না। ঝগড়া করে সমস্যার সমাধান হয়না। সমাধান চাইলে আলোচনায় বসতে হবে।
স্বরণ রাখবেন,
“মানুষকে কখনো অপমান করা যায়না সে নিজ ইচ্ছাকৃত অপমানিত হয় সেটা তার কর্মের জন্য হোক বা নির্বুদ্ধিতার জন্যই হোক।”
যারা ঝগড়া করে, মানুষের মনে কষ্ট দেয়, তারা মানুষের কাছ থেকেও কষ্ট ও অভিশাপ পায়। কারো সাথে ভাল ব্যাবহার করা যদি আদরের কাজ হয়, তাহলে কারো সাথে ঝগড়া করা ভয়ানক রকমের বেয়াদবী। ঝগড়াটে ব্যক্তি ঝগড়া করার সময় কারো সম্মানের কথা চিন্তা করেনা। সে অপরকে ছোট করার জন্য নিজেকেও ছোট করে।
ঝগড়ার কারণ সমূহ ঃ
১) হিংসা
২) EGO Problem
৩) মেয়ে বা প্রেম সংক্রান্ত।
৪) অর্থ সংক্রান্ত।
৫) স্বভাব বশত।
৬) জমি-জমা সংক্রান্ত।
৭) কারো মনে কষ্ট দিয়ে কথা বললে।
৮) কাউকে আঘাত করলে।
ক্ষতি সমূহ ঃ
১) সু-সম্পর্ক নষ্ট হয়।
২) অন্তরের কলুষতা প্রকাশ পায় ও সবাই তা দেখতে পায়।
৩) সম্মান হানী , সবার দৃষ্টিতে ছোট হয়ে যাওয়া।
৪) ভালবাসা ঘৃনায় পরিনত হয়।
৫) ভবিষৎ এ ক্ষতির সম্ভাবনা সষ্টি হয়।
৬) শিশুদের মনে ভয় সৃষ্টি হয়।
৭) ঘোরতর পাপ ও গোনাহ হয়।
৮) মারামারি, আত্মহত্যা, হত্যা পর্যন্ত হতে পারে।
৯) অনেক কষ্টের সাজানো সংসার নষ্ট হয়ে যায়।
ঝগড়া হতে রক্ষার উপায় ঃ
১) ইচ্ছাশক্তির প্রয়োগ।
২) তর্ক করা হতে বিরত হোন।
৩) কথাবার্তায় সাবধানতা অবলস্বন করুন।
৪) স্বভাবজাত ঝগড়াটে মানুষ হতে দুরে থাকুন।
৫) নিজের মধ্য থেকে ঝগড়া করার প্রবনতা দুর হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখুন।
৬) মানুষকে সম্মান করতে শিখুন।
৭) অন্যের বক্তব্য সম্পূর্ন না হলে, মাঝপথে বাধাঁ দিবেন না।
৮) ধর্ম, নৈতিকতা, ভাল ব্যাবহার অনুশীলন করুন।
৯) মানুষ বুঝে কথা বলুন।
১০) মানুষকে ক্ষমা করতে ও ভালবাসতে শিখুন।
১১) যদি ঝগড়াটা অপর পক্ষ থেকে শুরু হয় তাহলে আগে অপর পক্ষের সম্পূর্ণ কথাটা মনোযোগ সহকারে শুনুন । সে যদি ভূল ও মিথ্যাও বলে তাও শুনুন। তার মন হালকা হতে দিন। তার সব কথা বের হতে দিন।
১২) অপর পক্ষ কেন ঝগড়া করতে চাইছে তা বোঝার চেষ্টা করুন। বুঝতে পারলেই দ্রুত সমাধান বের হয়ে আসবে।
১৩) যদি অপর পক্ষকে থামানো না যায় তাহলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করুন। কারণ ঝগড়া না করলে কেউ কখনো ছোট হয়না। এতে করে আপনার মূল্যবান সময় বাঁচবে আর আপনি চিন্তা করার সময় পাবেন উপরন্তু আপনার কোন দোষও থাকলো না।
১৪) ঝগড়া করার আগে চিন্তা করুন এটা কি খুব বেশী জরুরী ?
১৫) মনে রাখবেন, একজন সুস্থ ব্যক্তি কখনো ঝগড়া করতে পারেনা। সুতরাং যিনি ঝগড়া করছেন তিনি মানসিক বা শারিরীক ভাবে অসুস্থ।