অজানাকে জানার কৌতুহল মানুষের চিরন্তন। মানুষ আদিকাল হতেই জানতে চায় ও বুঝতে চায়। আমরা সবাই জ্ঞান অর্জন করার জন্য বুদ্ধি হবার পর থেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দারস্থ হই। আসলে আমরা কি চাই? আমরা কি আসলে জ্ঞান অর্জন করতে চাই না জ্ঞানী হবার “CERTIFICATE” চাই । “CERTIFICATE” দিয়ে কখনোই শিক্ষাকে মূল্যায়িত করা যাবে না। আমরা অনেকেই “EDUCATION” বলতে ভুল বুঝি। “EDUCATION” শব্দটি এসছে Latin শব্দ “Educo” থেকে যার অর্থ কোন কিছু হতে উন্নিত হওয়ার। একজন শিক্ষিত ব্যক্তি তিনি নন যিনি প্রচুর পুথিগত বা তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন করেছেন। একজন শিক্ষিত ব্যক্তি হল সেই ব্যক্তি যিনি তার চিন্তাশক্তির এমন ভাবে বিকাশ ঘটিয়েছেন যাতে করে সে যা চান তাই পেতে পারেন কারো অধিকার ক্ষুন্ন না করে। সত্যিকার অর্থ না জানার কারণে বেশিরভাগ মানুষের মাঝে একটি ভূল বিশ্বাস কাজ করে যে, ‘জ্ঞানই শক্তি’ কিন্তু জ্ঞান তখনি শক্তি হয়ে উঠে যখন এটাকে সুনির্দিষ্ট ও সুশৃঙ্খলভাবে কাজে পরিণত করা যায়। তাই বলতে হবে প্রায়োগিক জ্ঞানই শক্তি। যতক্ষণ পর্যন্ত অর্জিত জ্ঞানকে কাজে পরিণত করা না যায় ততক্ষন পর্যন্ত জ্ঞানের কোনো মূল্য নেই।
এই পৃথিবীতে বিগত একশ বছর আগ পর্যন্ত যত জ্ঞানী-গুনি, মনীষি জন্ম নিয়েছেন এবং বিখ্যাত হয়েছেন তাদের সবারই কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তেমন একটা নেই বললেই চলে। এখনো এমন অনেকেই বিখ্যাত হচ্ছেন যাদের শিক্ষার দ্বার কলেজ পর্যন্ত থেকে বন্ধ হয়ে গেছে।
সক্রেটিস, শেক্সপিয়র, নেপোলিয়ণ, প্লেটো, হতে কবি কাজী নজরুল ইসলাম পর্যন্ত এবং এর পরেও এমন বহু বিখ্যাত ব্যক্তি আছেন যাদের প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা কম ছিল। তাই বলে কি তারা অশিক্ষিত ছিলেন ? তারা কি বিখ্যাত হন নি। শেক্সপিয়র ইংরেজী সাহিত্যে উচ্চতর ডিগ্রী নেননি, টমাস আলভা এডিসন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েননি, উইলভিল রাইট আর অরভিল রাইট ভাতৃদ্বয় এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েননি, তাই বলে কি তারা আবিষ্কার করেননি? তাদের আবিষ্কার সারা পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে। আমি বলছি না যে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোন মূল্য নেই। আমি শুধু বোঝাতে চাইছি যে মানুষ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্ম দিয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কারো জন্ম দেয়নি। মহান সৃষ্টিকর্তা আামাদের যে চিন্তাশক্তির ক্ষমতা দিয়েছেন তা বিশ্বের সকল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার উর্ব্ধে। তাই অশিক্ষিত সেই যার চিন্তাশক্তির বিস্তার নেই। যে শিক্ষা দ্বারা কেউ লাভবান হয়না, আদৌ কি সেই শিক্ষার কোনো মূল্য আছে । প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আমাদের চিন্তার দিক নির্র্দেশনা দেয় আর চিন্তা করতে সাহায্য করে।
আমাদের দেশের শিক্ষকেরা শিখেছেন যে, কিভাবে শিক্ষাকে শিখাতে হয়। কিন্তু তারা শিক্ষাকে কাজে লাগানোর প্রক্রিয়া খুব একটা শেখান না বললেই চলে। তারা কোর্স কারিকুলাম শেষ করার চিন্তাই শুধু করেন। কিন্তু উন্নত চিন্তাশক্তির বিকাশ ছাড়া উন্নত শিক্ষা-দীক্ষা আমাদের কতদূরে নিয়ে যাবে তা আদৌ চিন্তার বিষয়।
উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে, জ্ঞানই যদি শক্তি হয় তাহলে বাংলাদেশের অন্যতম ব্যাবসায়ী হতেন ঢাকা ইউনিভার্সিটির মত নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিজনেস ডিপার্টমেন্টের ডীন । কারণ উনি ব্যাবসা বানিজ্য সম্পর্কে অন্য দশজনের চাইতে ভাল বোঝেন, বোঝাতে পারেন। ব্যাবসা বোঝা আর ব্যাবসা করার মাঝে বিস্তর পার্থক্য তাই আমাদেরকে উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অঢেল অর্থ খরচ করে পড়তে পারার চেয়ে আমাদের চিন্তাশক্তিকে উন্নত করতে পারছি কিনা তা যাচাই করে দেখতে হবে।
আগেকার দিনে শিক্ষকদের অনেক সম্মান জানানো হত। বাবা-মার পরে শিক্ষককে ধরা হত। কিন্তু আজকাল আমরা কি দেখছি? এখনকার সমাজে শিক্ষকদের ছাত্র-ছাত্রীরা সম্মান করে না বললেই চলে। এর কারণ হল দুটি
প্রথমত, পিতা-মাতারা তাদের সন্তানদের শিক্ষকের গুরুত্ব বোঝান না।
দ্বিতীয়ত , শিক্ষকরা নিজেরাই তাদের গুরুত্ব ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তুলে ধরেন না, তারা সম্মানের চেয়ে অর্থ আয় করার মেশিন মনে করেন ছাত্র ছাত্রীদের।
যে ছাত্র শিক্ষককে ঠিকমত সম্মান করা শিখে নাই সে যদি পড়াশুনা শেষ করে শিক্ষকতা করে তাহলে সেটা কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা কি চিন্তা করা যায়? প্রাচীন মোঘল আমলে দিল্লীর বাদশাহ আকবর তার তিন পুত্রের ওজনের সমান স্বর্ণ শিক্ষককে দিতেন যা বিশ্বের কোন কালের কোন শিক্ষকের বেতন হিসেবে অর্জন হয়নি।
ইসলাম ধর্মে আছে, মহান আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন,
“ যে বিদ্বান ব্যক্তিকে সম্মান করে সে আমাকে সম্মান করে।” – আল হাদিস
শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য বুঝতে হবে, এটা একটা ক্রমাগত বিষয় তাই শিক্ষার সাথেই সবসময় থাকতে হবে।
1 comment
very nice